
মেভটাইমস ডেস্কঃ ওআমার দেশের মাঠি তোমার পরে ঠেকাই মাথা তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা, সুন্দরবন জন্মভূমি বাংলা মায়ের এক নিরাপত্তার চাঁদর,সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহত্তর অখণ্ড বনভূমি। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবন আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের গর্ব ও অহংকার।
একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মোট আয়তনের ২৫% বনভূমি থাকা দরকার। অথচ আমাদের রয়েছে মাত্র ১৭% বনভূমি। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবন। বিশ্বের এই বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ বিপুল সংখ্যক অসহায় মানুষের অর্থের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেকগুলো শিল্প (যেমন নিউজপ্রিন্ট, দিয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন অকাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ন কমপক্ষে তিন লাখ উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উৎপাদনমুখি ভূমিকার পাশাপাশি সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী গণমানুষ ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই সুন্দরবন আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিডর,আইলা,ফণী,বুলবুল,আম্ফান,ইয়াসের মৃত্যু-থাবা থেকে রক্ষা করেছে।
তিতা কথা হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের এই অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণে অবহেলা করছি। সুন্দরবনকে সুন্দর থাকতে দিচ্ছি না। বিভিন্নভাবে সুন্দরবনের নিবিড় পরিবেশের ওপর কালো ছায়া ফেলছি। যেমন, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দেখছি খুলনা সাতক্ষীরার সুন্দরবন এলাকায় এক প্রকার অসাধু জেলেরা সুন্দরবনের ছোট ছোট ঝরা বা খালের ভিতর বিষ দিয়ে নির্বিচারে মাছ মেরে চলেছে এবং সুন্দরবনে বড় বড় গাছ গুলো অনায়সে কেটেই চলছে, প্রতিনিয়ত স্বার্থনেষী মানুষেরা হরিণ ও বাঘ শিকারে মাতোয়ারা,সুন্দরবন হতে বিভিন্ন রকম বন্যপ্রাণী চোরাপথে দেশ ও দেশের বাহিরে পাচার করা হচ্ছে তাছাড়াও সুন্দরবনের নদীগুলো দিয়ে রাতভর নৌযানের চলাচল। সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে গত এক বছর সুন্দরবনের নানা নদী ব্যবহার করে বহু ইঞ্জিন চালিত নৌযান জাহাজ চলাচল করে। এসব নৌযান প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর মৃগামারী এলাকায় তলা ফেটে তেলবাহী একটি ট্যাংকার ডোবে। ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিলো। এছাড়াও সুন্দরবনকে ঘিরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রকল্প ও শিল্প কারখানা। এগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ প্রাণীকুলের জন্য খুবই বিপজ্জনক। সার্বিকভাবে সচেতনতার অভাব সুন্দরবনকে ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সুন্দরবন আমাদের সম্পদ গোটা বাংলার বাঙ্গালী গর্ব। এটা রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের সকলের। তাই অবিলম্বে সুন্দরবন রক্ষায় সুন্দরবনের নদীতে ক্ষতিকর নৌযান চলাচল বন্ধ ও সুন্দরবন বিধ্বংসী সকল প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নসহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। স্রষ্টার সৃষ্টির নেয়ামত আমাদের অহংকার সুন্দরবন সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক বিশ্ব দরবারে, যুগ থেকে যুগান্তর ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, আসুন সুন্দরবন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সচেতন করি জেলে বাওয়ালী,মৌয়ালী সহ সকলকে।
লেখক সাংবাদিক মোঃ আলফাত হাসান সাতক্ষীরা জেলা থেকে,
মোবাইল নং ০১৯১৪৩৯৪১২৯