
মেভটাইমস অনলাইন ডেস্কঃ-
বাংলাদেশের জন্য জটিল প্রভাব তৈরি করে তুলেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এর পাশাপাশি ঢাকার পক্ষপাতহীন পররাষ্ট্রনীতিকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে মস্কো-ওয়াশিংটনের বিরোধ। যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্ক প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেই সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হবে। এমন মত দিয়েছে নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস)। গতকাল (২৮ জানুয়ারী) সংস্থাটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ এমন সময়ে পরীক্ষায় পড়েছে যখন দেশটি দুটি বড় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দেশের আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে আরও গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন।
এসবের মধ্যেও বাংলাদেশে বড় বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করছে রাজনৈতিক বিরোধীরা। মূলত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং নিবন্ধন হারানো ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামী (জেইআই) প্রাসঙ্গিকতা ফেরানো আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ইতিবাচকতা মোকাবিলার চেষ্টায় রয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে দেশে ঘটে যাওয়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির ইতিবাচকতায় এই স্থিতিশীলতা এসেছে।
ইএফএসএএসের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনে গত বছর রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করার পর বাংলাদেশের ওপর বৈদেশিক চাপ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আবদুুল মোমেন সতর্ক করে দেওয়ার তাগিদ অনুভব করেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ দেখতে চায় না বাংলাদেশ।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে ওঠার পর যে অল্প কয়েকটি দেশ উভয় দেশের সঙ্গে সতর্কভাবে সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। মনে করা হচ্ছে উভয়ই দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর প্রত্যেকের সঙ্গেই তারা সৌহার্দ এবং সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায়।
সম্প্রতি খবর দিয়া হয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আটকা পড়েছে বাংলাদেশ। উভয় দেশই তাদের পরাশক্তির মর্যাদা নিয়ে নিজেদের বিরোধের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত জোটে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চীনের আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সুযোগ পেতে পারে দেশটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এটা চ্যালেঞ্জের বিষয়।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার শুরু। ওই সময়ে গুমসহ মানবাধিকার হরণের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট নিরাপত্তা বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে ২০২২ সালে। তখন বাংলাদেশকে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মোমেন বলে দেন, ‘গণতন্ত্র নিয়ে অন্য কোনো দেশের সবক তাদের দরকার নেই।’
এদিকে, বেইজিংয়ের সঙ্গেও ঢাকার উত্তেজনা আছে। ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি যদি ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটের কোনো উদ্যোগে যোগ দেয়, তা হলে ২ দেশের সম্পর্ক ‘যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত’ হতে পারে।
জবাবে বাংলাদেশ বলে দেয়, তারা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবে।