
মেভটাইমস অনলাইন ডেস্কঃ-
যুক্তরাজ্যের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলি রেজা আকবরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আকবরী ইরানি-ব্রিটিশ নাগরিক। গতকাল বুধবার (১১জানুয়ারী) তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইরানের বিচার বিভাগীয় সংবাদ সংস্থা মিজান অনলাইন জানিয়েছে, আকবরীকে দুর্নীতি এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তার ক্ষতি করার কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই কর্মকর্তাকে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় ‘দেশের সংবেদনশীল এবং কৌশলগত কেন্দ্রগুলোতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে মিজান জানিয়েছে, নিজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে আকবরী যুক্তরাজ্যের ‘সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস’- এমআই৬-এর ‘গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তচর’ হয়ে উঠেছিলেন।
ইরানের বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ২০০১ সাল পর্যন্ত উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন অভিযুক্ত আকবরী। তবে মূলত তিনি ছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের ‘মূল গুপ্তচর’, ইরানি গোয়েন্দারা তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার গুপ্তচরবৃত্তির মুখোশ খুলে দিয়েছে।
তাসনিম আরও জানিয়েছে, আকবরী ইরান ও পশ্চিমা শক্তির মধ্যে অতীতের পরমাণু আলোচনার বিষয়ে গোয়েন্দাগিরি করেছিলেন। আকবরী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির অধীনে উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত আকবরী, পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ইরান সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, আকবরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই মৃত্যুদণ্ড বর্বর এক শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। এটি মানবজীবনের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন।’
অবশ্য ইরানি কর্তৃপক্ষ আকবরীর বিচারের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই প্রকাশ করেনি। গুপ্তচরবৃত্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত অন্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সাধারণত গোপন আদালতে বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা তাদের নিজস্ব আইনজীবী বেছে নিতে পারে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা প্রমাণও দেখতে দেওয়া হয় না।
তাসনিম জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট আকবরীর সাজা বহাল রেখেছে এবং তার একজন আইনজীবীর প্রবেশাধিকার রয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ তার ফাঁসি কার্যকর হবে, সে বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এর আগে ইরান এবং ইরাকের বিধ্বংসী আট বছরের যুদ্ধের পর ১৯৮৮ সালের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আকবরী। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।